ইচ্ছা পূরণ (শেষ পার্ট) - Storybd3

Latest

বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র

বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০

ইচ্ছা পূরণ (শেষ পার্ট)

গল্প : ইচ্ছা পূরণ

লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল

শেষ পর্ব



টুটুল অবাক হয়ে দেখল ঝিনুকটা নিচে পড়তেই ঘটাস করে একটা শব্দ হলো আর হঠাৎ ঝিনুকার ভিতর থেকে সরু হয়ে ধোঁয়া বের হতে শুরু করেছে। টুটুল এতো অবাক হলো যে, সেটা বলার মতো না। সে খানিকক্ষণ অবাক হয়ে ধোঁয়াটার দিকে তাকিয়ে রইল। দেখল ধোঁয়াটার উপরে উঠে জমা হতে শুরু করেছে।

টুটুল না হয়ে অন্য যে কেউ হলে ভয়ে আধমরা হয়ে যেতো কিন্তু টুটুল একটুও ভয় পেলো না, বরং কী হয় সেটা দেখার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।

আস্তে আস্তে ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়ে গেল, দেখতে দেখতে ঝিনুকটার ভেতর থেকে কুচকুচে কালো ধোঁয়া গলগল করে বের হতে থাকে। আর সেই ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে জমাট বাঁধতে শুরু করে। দেখতে দেখতে সেটা একটা মানুষের মতো হয়ে যায়, মানুষটার গায়ের রং মিশমিশে কালো, লাল চোখ, ন্যাড়া মাথার দুই পাশে দুটো শিং, গলায় হাড়ের মালা। মানুষটি হা করল তখন দেখা গেল তার বড় বড় ধারালো দাঁত এবং দাঁতের ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে টকটকে লাল জিব। শুধু তাই নয় তাই মুখের ভেতর থেকে আগুন বের হয়ে এল।

অন্য যে কেউ হলে ভয়ে তার হার্টফেল হয়ে যেতো কিন্তু টুটুল একটুও ভয় পেলো না, বরং আনন্দে হাততালি দিয়ে বলল, "তুমি নিশ্পয়ই আলাদীনের সেই জীন! কী সুইট!"
ভয়ংকর মানুষটা অবাক হয়ে বলল, "তুমি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছ না?"
"ভয় কেন পাব? জীন দেখতে তো এরকমই হয়! আমি কার্টুনে দেখেছি।"
"কার্টুনে দেখেছ?"
টুটুল বলল, "হ্যাঁ। এখন তুমি আমাকে বলবে, আদেশ করুন জাঁহাপনা। তারপর আমি তোমাকে যেটাই আদেশ করব তুমি সেটাই করবে। ঠিক বলেছি কীনা?"

ভয়ংকর জীনটা মুখ থেকে আগুন বের করে বলল, "মোটেই সেটা বলব না। আমাকে কী বোকা পেয়েছ?"
টুটুল বলল, "বলবে। একশবার বলবে। তুমি আমাকে তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে দেবে। দেবে না?"
"জীনটা মাথা চুলকে বলল, "তুমি একটা কোথা থেকে জেনেছ?"
টুটুল বলল, "সবাই জানে। সবাই আলাদীনের গল্প পড়েছে।"
"সত্যি?"
"হ্যাঁ।"


"ঠিক আছে। তাহলে আমি তোমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করে দিই। কিন্তু মনে রেখো--"
"কী মনে রাখব?"
"তিনটা ইচ্ছা পূরণ করার পর কিন্তু তোমার জীবন শেষ। তোমাকে ধরে এমন একটা আছাড় দেব যে তুমি ভর্ত্তা হয়ে যাবে।"
টুটুল রাগ হয়ে বলল, "এইটা কেমন কথা?"
"এইটা সত্যি কথা। বলো তোমার প্রথম ইচ্ছা কী?" বলে জীনটা টুটুলের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসল এবং তার মুখ থেকে ভয়ংকর আগুনের শিখা বের হয়ে এল আরেকটু হলে সেই আগুনে টুটুলের চুল পুড়ে যেতো। টুটুল লাফ দিয়ে পিছনে সরে এসে বলল, "বন্ধ করো, তোমার আগুন বন্ধ করো।" জীনটা তখন তার মুখের আগুন বন্ধ করে বলল, "ঠিক আছে, বন্ধ করলাম। আমি তোমার প্রথম ইচ্ছাটা পূরণ করলাম। এখন তোমার দ্বিতীয় ইচ্ছাটা বলো।"
টুটুল রেগে মেগে বলল, "এটা মোটেও আমার প্রথম ইচ্ছা ছিল না।"

জীনটা আনন্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, "ছিল। নিশ্চয়ই এটা তোমার প্রথম ইচ্ছা ছিল। আমি স্পষ্ট শুনেছি তুমি বলেছ, "বন্ধ করো। তোমার আগুন বন্ধ করো। তুমি বল নাই?"
"হ্যাঁ বলেছি। তুমি আগুন দিয়ে আরেকটু হলে আমার চুল পুড়িয়ে দিতে সেই জন্যে বলেছি। কিন্তু এটা মোটেই আমার প্রথম ইচ্ছা ছিল না।"
জীন বলল, "ছিল।"
টুটুল বলল, "ছিল না।"
জীনটা তখন হাত দিয়ে থপ করে টুটুলের শার্টের কলারটা ধরে তাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে উপরে তুলে একেবারে তার চোখের সামনে ঝুলিয়ে রেখে বলল, "যদি এটা তোমার ইচ্ছা না হয়ে থাকে তাহলে কেন আমাকে সেটা করতে বললে, বল?" জীনটা টুটুলকে ঝুলিয়ে রেখে চোখের সামনে দোলাতে লাগল।

টুটুল রেগে মেগে বলল, "ভালো হবে না কিন্তু। আমি বলে দিচ্ছি, ভালো হবে না।"
জীন হাসি হাসি মুখে টুটুলের দিকে তাকিয়ে তাকে আরো জোরে জোরে দোলাতে দোলাতে বলল, "তাই নাকি? ভালো হবে না? কোন জিনিসটা ভালো হবে না?" বলে সে টুটুশকে আরো উপরে তুলে ঝুলিয়ে রাখল।

টুটুল চিৎকার করে বলল, "নামাও আমাকে। নিচে নামিয়ে দাও।"
জীনটা সাথে সাথে টুটুলকে নামিয়ে ভালো মানুষের মতো বলল, "ঠিক আছে। তোমাকে নামিয়ে দিলাম। তোমার দুই নম্বর ইচ্ছাটাও পূরণ করে দিলাম। এখন তোমার বাকি আছে শেষ ইচ্ছাটা। বলো তোমার শেষ ইচ্ছাটা কী?"
টুটুল বুঝতে পারল, তার কপালে খুবই পাজী একটা জিন এসে জুটেছে। এটা তো তার কোনো সত্যিকার ইচ্ছা পূরণ করবেই না, উল্টো তার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করেছে সেটা বলে সত্যি সত্যি তাকে ধরে একটা আছাড় দিয়ে ভর্ত্তা করে ফেলবে। কাজেই সে যদি সাবধান না থাকে মহা বিপদে পড়ে যাবে। তিন নম্বর ইচ্ছাটা তাকে ঠিক করে ব্যবহার করতে হবে।


জীনটা টুটুলের দিকে তাকিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসল। তারপর চোখ টিপে বলল, "বলো, তোমার তিন নম্বর ইচ্ছাটা তাড়াতাড়ি করে বলো।" টুটুল বলল, "আমি যেটাই বলি সেটাই তুমি করবে তো?"
"আমি যদি সেটা করতে পারি, অবশ্যই করব। এখন তুমি যদি বলো আকাশ থেকে একটা তারা ধরে এনে দাও তাহলে তো সেটা পারব না।" "না তোমাকে আমি আকাশের চাঁদ তারা এনে দিতে বলব না"


"চমৎকার।" জীন তার দাঁত বের করে হেসে বলল, "এবারে বলো, তোমার তিন নম্বর ইচ্ছাটা কী?"
টুটুল বলল, "আমি যেটা চাইব সেটা পূরণ করা তোমার জন্যে খুবই সোজা।"
"শুনে অনেক আনন্দ পেলাম। দেরি না করে বলে দাও। তোমার তিন নম্বর ইচ্ছাটা কী?"
টুটুল বলল, "আমার তিন নম্বর ইচ্ছা হচ্ছে আরো তিনটা নতুন ইচ্ছা পুরণ করে দেওয়া।"
জীনটা চোখ বড় বড় করে খানিকক্ষণ টুটুলের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর চোখ কপালে তুলে বলল, "কী বলছ তুমি?"
টুটুল দাঁত বের করে হেসে বলল, "আমি ঠিকই বলেছি। আরো তিনটা নতুন ইচ্ছা।"
জীনটা আবার বলল, "কী বলছ তুমি? এটা তো চোট্টামি।"
টুটুল বলল, "চোট্টামিটা কে শুরু করেছে বলো।"
জীন বলল, "কিন্তু কিন্তু......."
টুটুল বলল, "শুধু যে তিনটা নতুন ইচ্ছা তাই না। নতুন তিনটা ইচ্ছার প্রথম দুইটা ইচ্ছা পূরণ হবার পর তিন নম্বর ইচ্ছাটা তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখি। সেটা হচ্ছে আরো নতুন তিনটা ইচ্ছা। এভাবে চলতেই থাকবে।"
জীন চোখ কপালে তুলে দড়াম করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। যা একটা শব্দ হলো সেটা বলার মতো না।


-সমাপ্ত-



যারা আমাদের এই গল্পটা পড়েছেন আমি আশা করি গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে দয়া করে এই গল্পটা আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা চাই গল্প পড়ে সবাই আনন্দ উপভোগ করুক। এতেই আমাদের সার্থকতা। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন