ইচ্ছা পূরণ (পার্ট ১) - Storybd3

Latest

বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র

মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০

ইচ্ছা পূরণ (পার্ট ১)

গল্প : ইচ্ছা পূরণ

লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল

পর্ব: ১


টুটুলের বয়স দশ। কিন্তু এই দশ বছর বয়সেই যা দুষ্টুমি শিখে গিয়েছে সেটি বলার মতো নয়। যখন সে আরো বড় হবে, তখন কী হবে সেটা নিয়ে সবাই খুব চিন্তার মাঝে আছে।
যেমন ধরা যাক, তাদের বাসার টিকটিকিগুলোর কথা, একদিন সে একটাকে ধরার চেষ্টা করল। টিকটিকিকে ধরার চেষ্টা করলে তাদের লেজটা খুলে আসে এবং তিড়িং তিড়িং করে নড়তে থাকে। সেটা দেখে টুটুল এতো মজা পেলো যে, সে একটা একটা করে সবগুলো টিকটিকির লেজ খসিয়ে ফেলল। তাদের বাসার টিকটিকিগুলোর এখন আর কোনো লেজ নেই।
টিকটিকির লেজ খসে যায় দেখে তার ধারণা হলো গরু, ছাগল, মহিষ কিংবা বানরের লেজও মনে হয় টান দিয়ে খুলে ফেলা যাবে। সেটা পরীক্ষা করার জন্যে সে লেজওয়ালা কোনো প্রাণী খুঁজছিল কিন্তু কোনো প্রাণীই টুটুলকে তাদের লেজ ধরে টান দিতে দিচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত একদিন সে রাস্তার একটা গুরুকে হেলতে দুলতে যেতে দেখল। তখন সে চুপি চুপি পিছনে গিয়ে গরুর লেজ ধরে দিল একটা হ্যাঁচকা টান। গরুটা তখন খুবই রেগে টুটুলকে যা একটা ধাওয়া দিয়েছিল সেটা বলার মতো না। তারপর ধরা যাক, তার চুল কাটার ঘটনাটা। সেলুনে নাপিত যখন তার চুল কাটে টুটুল সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে।


একবার তার চুল যখন অনেক বড় হয়েছে তখন তার আম্মু তাকে চুলকাটার টাকা দিয়ে সেলুনে পাঠিয়েছেন।টুটুল ভাবল, সে নিজে নিজে চুল কেটে টাকাটা নিয়ে নিবে। তাই তখন বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁচি দিয়ে নিজের চুল নিজে কাটার চেষ্টা করল।টুটুল খুব অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, চুল কাটা মোটেও সোজা নয়, আর সেটা যদি নিজের চুল হয়ে থাকে তাহলে সেটা কাটা রীতিমতো অসম্ভব।সে যেখানেই কাঁচি দিয়ে চুল কাটার চেষ্টা করে সেখানেই এক খাবলা চুল কাটা হয়ে একটা গর্তের মতো হয়ে যায়।
টুটুল শেষ পর্যন্ত যখন নিজের চুল কাটার চেষ্টা শেষ করে বের হয়েছিল তখন তার চেহারাটা এতো বিদঘুটে হয়েছিল যে, টুটুলের আম্মু তাকে দেখে রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠেছিলেন।তখন তাকে ধরে সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং পুরো মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছিল। অনেকে মনে করতে পারে তার মাথা ন্যাড়া হওয়ার পর সে বুঝি তার চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা বন্ধ করেছিল।সেটা মোটেও সত্যি নয়, কারণ তাকে পরদিন দেখা গেল কালো মার্কার দিয়ে সে তার নিজের ন্যাড়া মাথায় কালো চুল আঁকার চেষ্টা করে বসে আছে।তার ন্যাড়া মাথা থেকে কালো রং দূর করার জন্যে পুরো মাথা কেরোসিন দিয়ে ধুতে হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন টুটুলের শরীর থেকে কেরোসিনের গন্ধ বের হতো।

কাজেই টুটুলকে নিয়ে তার আব্বু আম্মু যখন কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলেন তখন টুটুল কখন কী করে ফেলে সেটা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কক্সবাজার গিয়ে টুটুল অবশ্য সমুদ্র দেখে এতো অবাক হয়েছিল যে, সে বেশিরভাগ সময় সমুদ্রের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। একটার পর একটা ঢেউ আসছে এবং বালুবেলায় সেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে এবং সেটা চলছে তো চলছেই, কখনোই থেমে যাচ্ছে না। টুটুল সেটা খুবই অবাক হয়ে দেখছিল। বালুবেলায় টুটুল যখন ছোটাছুটি কর খেলছে তখন হঠাৎ করে সে একটা লাল কাঁকড়া দেখতে পেল। কাঁকড়াটা ধরার জন্যে সে যখন ছুটে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ কাঁকড়াটা একটা গর্তের মাঝে ঢুকে গেল। টুটুল এতো সহজে ছেড়ে দেবার মানুষ না।

সে হাঁটু গেড়ে বসে বালু সরিয়ে কাঁকড়াটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে লাগল। লাল কাঁকড়াটা সে আর খুঁজে পেল না কিন্তু তার বদলে সে একটা বড়সড়ো ঝিনুক পেয়ে গেল। ঝিনুকটা যে শুধু বেশ বড় তা না, ওপরের নক্সাটা দেখে মনে হয় সেখানে বুঝি কিছু একটা লেখা। টুটুল ঝিনুকটা উল্টেপাল্টে দেখে সেটা পকেটে রেখে দিল।
কক্সবাজারের বালুবেলায় বেড়িয়ে সমুদ্রের পানিতে দাপাদাপি করে সন্ধেবেলা সে তার আব্বু আম্মুর সাথে হোটেলে ফিরে এসেছে। গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে টুটুল তার আব্বু আম্মুকে নিয়ে নিচে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছে। খাওয়া শেষ করার পর তারা যখন হোটলের রুমে ফিরে আসবে ঠিক তখন তার আব্বু হঠাৎ করে তার একজন পুরানো বন্ধুকে দেখতে পেলেন। তারা তখন আবার টেবিলে বসে দুনিয়ার গল্প জুড়ে দিলেন। টুটুল কিছুক্ষণ তাদের গল্প শোনার চেষ্টা করল কিন্তু বড় মানুষেরা এতো রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারে যে, টুটুল একেবারে বিরক্ত হয়ে গেল। সে তখন ঘ্যান ঘ্যান করে বলতে লাগল, "আব্বু আম্মু আমার ঘুম পেয়েছে।"


বড় মানুষেরা ছোটদের কোনো গুরুত্ব দেয় না, তাই টুটুলকে আব্বু আম্মু তার কথার কোনো গুরুত্ব দিলেন না। টুটুল তখন আরো জোরে জোরে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগল। আব্বু তখন শেষ পর্যন্ত হোটেলের রুমের একটা চাবি টুটুলের হাতে দিয়ে বললেন, "যা, গিয়ে শুয়ে পড়। আমরা আসছি।"

টুটুল তখন চাবি নিয়ে উপরে উঠে রুমের তালা খুলে হোটেলের রুমে ঢুকল। রুমের জানালা দিয়ে সে বাইরে তাকাল এবং হঠাৎ করে সে ঘরের ভেতর একটা মচমচ শব্দ শুনতে পায়। শব্দটা কোথা থেকে আসছে সেটা খুঁজে বের করতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখল সেটা আসছে তার ভেজা প্যান্ট থেকে।
ভেজা প্যান্ট থেকে কেন শব্দটা আসছে সেটা খুঁজে দেখতে গিয়ে টুটুল অবাক হয়ে দেখল, শব্দটা আসছে তার প্যান্টের পকেট থেকে। টুটুল ভাবল তার প্যান্টের পকেটে একটা ইদুঁর কিংবা ব্যাঙ ঢুকে পড়েছে। টুটুল তখন খুব আগ্রহ নিয়ে প্যান্টটা উল্টা করে ধরে একটা ঝাকুনি দিল এবং পকেট থেকে ঝিনুকটা শব্দ করে নিচে পড়ে গেল।

আমাদের সাথে এতক্ষন থাকার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি গল্পটা ভালো লেগেছে। যদি গল্পটা ভালো লেগে থাকে তাহলে দয়া করে কমপক্ষে আপনার একজন বন্ধুর কাছে গল্পটা শেয়ার করুন। আমরা চাই সবাই গল্প পড়ে গল্পের আনন্দটা উপভোগ করুক। আর আপনার মনের কোনে জমে থাকা যেকোন প্রশ্ন myproshno.xyz এ শেয়ার করতে পারেন এবং সবথেকে বেশী প্রশ্ন উত্তর করে জিতে নিতে পারেন পুরুষ্কার। আর হ্যা ভালো ভালো গল্প পেতে সবসময় ভিজিট করুন Storybd3.blogspot.com। ধন্যবাদ।

1 টি মন্তব্য: