অভিনেতা (শেষ পর্ব) - Storybd3

Latest

বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

অভিনেতা (শেষ পর্ব)






শেষ পর্ব

অভিনেতা

আহমেদ খান

 জাফি চোখ মেলে তাকাল। ঘরের ভেতর কটকটে হলুদ আলো। এই আলো কে জ্বেলেছে? পরক্ষণেই মনে হলো এটা আসলে তার ঘর নয়। তাহলে কি স্বর্গ সত্যি আছে? সে কি তাহলে এর মধ্যেই মারা গেছে? আচ্ছা এটা কি নরক? কিন্তু পরক্ষণেই তার সামনে এসে যে দাড়াল, তাকে দেখে ভ্রম কাটল জাফির। রু। প্রডিউসার। জাফি কিছুদিন তার সঙ্গে ছিল। ভীষণ কড়া আর খসখসে স্বভাবের। কিন্তু কণ্ঠটা ভারী মোলায়েম। 'তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ?' 'এই জায়গাটা তোমার চেনা জাফি। আমাদের স্টুডিও জাফি।' 'স্টুডিও? স্টুডিওতে এখনো আমার কাজ বাকি আছে?' রু ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। বলল, 'তুমি জাত অভিনেতা। তোমার কাজ কি কখনো শেষ হয়?' 'কী চাও তোমরা, পশু?' 'তুমি নাকি মারা যাচ্ছো? স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করার অনুমতি নাকি তোমাকে দিয়ে ফেলেছে ইউনিয়ন?' 'তাতে তোমার কী, ডাইনি?' 'কিচছু না। আবার অনেক কিছু। আমাদের স্টুডিওতে তোমার তিন-তিনটা প্রজেক্ট, তুমি জানো না?' 'তাতে কী? আমি মারা গেলেও তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমার পাঁচ শ রকমের অভিব্যক্তি আর হাজার রকমের অঙ্গভঙ্গি তোমাদের কাছে বিক্রি করা আছে। আমার কণ্ঠ জমা আছে তোমাদের কাছে। আমি থাকলেই কী আর না থাকলেই কী! তোমাদের প্রজেক্ট কে আটকাবে? পাঁচ বছর ধরে তো তোমরা এভাবেই সিনেমা বানাচ্ছ, আমাকে ছাড়া, আমার সিনেমা!' 'টেকনোলজির এই বিকাশে তো তোমার আনন্দিত হওয়ার কথা জাফি। শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও তুমি অভিনয় করছ। তুমি মানুষের নায়ক হয়ে উঠছ। সবাই তোমাকে সুপারস্টার বলে, তোমার অভিনয়ের প্রশংনা করে। প্রত্যেক মাসের ক্রেডিট্টে মোটা অঙ্ক ঢোকে, আর কী চাও? 'তুমি কথনো কবিতা পড়েছ?' 'সেটা আবার কী?' 'তোমার মতো নিরেট মানুষদের জন্য যা নয়, তা-ই। তুমি জানো আমার রোবট ম্যানেজারটা তোমার চেয়ে অধিক মানুষ!' রু একটু থমকে তাকাল। তারপরই হাসল। বলল, মানুষ হওয়াই এখন গালি, জানো তো? যেমন তুমি। কয়েক বছর পরে হতাশায় ভুগছ শুধু মানুষ থেকে গেছ বলে। মানুষ থেকে আছ বলেই কড়া ড্রাগস নিচ্ছ, আর এখন ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বেচ্ছামৃত্যু বরুণ করার অনুমতি জোগাড় করেছ। তোমার এই মনুষ্য-জীবনের দাম কী? 'অনেক হয়েছে। আমাকে এখন যেতে দাও।' 'তোমাদের সাথে আমার কোম্পানির আগামী ১০ বছরের চুক্তি, ভুলে গেছ?' আমার মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে চুক্তিও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। আরেকবার চুক্তিপত্রটা পড়ে নিতে পারে এবং সে চুক্তি দেখিয়ে আমরা ইউনিয়নের কাছ থেকে তোমার স্বেচ্ছামৃত্যু রদও করতে পারি, পারি না?' জাফি একটা শ্বাস ফেল। রু যা বলল, তা সত্যি! ওরা যদি আবেদন করে, ইউনিয়ন ওর স্বেচ্ছামত্যুর অনুমতি খারিজ করে দেবে। 'কী চাও তুমি, রু?' 'তুমি মারা যেতে পারে। কিন্তু তার আগে দুইটা চুক্তিতে আসতে হবে তোমাকে। এক, তোমার মৃত্যুর কথা কেউ জানবে না। মানে আমজনতা জানবে না। তাদের কাছে তুমি বেঁচে থাকা সুপারস্টার জাফরান জাফি হয়েই থাকবে। আর...' 'আর...?' 'তোমার একটা রেপ্লিকা রোবট তৈরি করে রেখেছি আমরা। যেদিন তুমি মারা যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলে, সেদিনই আমরা রোবটটা তৈরি করতে শুরু করেছিলাম। তুমি মরলে এই রোবটটাই জাফরান জাফির পাবলিক জীবন সামলাবে। সাংবাদিক সামলাবে। অনুষ্ঠানে যাবে। তুমি মরতে চাইলে ওকে ব্যবহারের অনুমতি দাও জাফি!' জাফির মনে হলো দম আটকে আসবে। বেশ কিছুক্ষণ রুর দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলল, 'তুমি একটা ডাইনি!'

চার

বাইরে থেকে দেখলে স্কোয়াডটা দেখতে ক্রিস্টালের পিরামিডের মতো। সম্ভবত মিসরের পিরামিডের আদলেই তৈরি করা হয়। সেই পিরামিডগুলোর মতো এই স্কোয়াডগুলোও তো আসলে একেকটা কবরই। অনুমতিপত্র দেখিয়ে ভেতরে ঢোকার পরই জাফিকে একটা নম্বর দেওয়া হয়। চলমান লিফটে সেই নম্বরে চাপ দেওয়ামাত্র প্রায় বিদ্যুৎগতিতে একটা ক্যাপসুলের ভেতর ঢুকে পড়ে জাফি। সুন্দরী এক রোবট এগিয়ে আসে। 'মৃত্যুর জন্য আজকের দিনটা খুব সুন্দর, স্যার।' 'হ্যাঁ। আজকের দিনেই আমি জন্মেছিলাম আমাদের কেন্দ্রীয় শিশু সদনে।' 'অভিনন্দন স্যার। সবার ভাগ্য আপনার মতো হয় না। আপনি কি ধীর মৃত্যু চান, নাকি দ্রুত?' জাফি উত্তর দিতে পারে না। 'ধীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্যার আমরা একটা ট্র্যাংকুলাইজার পুশ করব। আপনি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়বেন এবং লম্বা একটা ঘুমের ভেতর আপনি মারা যাবেন।' 'এটা বোধ হয় খুব খারাপ নয়, তাই না?' 'কিছুটা খারাপ স্যার। কেউ কেউ ঘুমের ভেতর থেকে জীবনে ফেরত আসতে চায়, কিন্তু আসতে পারে না। তখন তার কষ্ট হয়। আমি শুনেছি কষ্ট মানুষকে খুব যন্ত্রনা দেয়। এটা কি সত্যি স্যার?' 'তোমাদের আরেকটা উপায় কী?' 'দ্রুত পদ্ধতি স্যার। আমরা একটা বিষাক্ত পিল খেতে দিই। তিন সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে আপনার সব ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে স্যার।' 'তাহলে তো এটাই ভালো, তাই না?' 'দ্রুত স্যার। কিন্তু ভালো কি না জানি না। চোখ-মুখ নাক-কান দিয়ে হঠাৎ খুব রক্ত বের হয়। সাবজেক্ট খুব চিৎকার করে। খুবই চিৎকার করে।' 'তোমার কী মনে হয়, আমার কীভাবে মরা উচিত?' 'আমার কাছে তথ্য আছে স্যার, সমাধান নেই। আপনার কি কোন শেষ ইচ্ছা আছে স্যার?'

পাঁচ

কেন্দ্রীয় শিশু সদনের ছেলেমেয়েদের অবস্থা আজকে দেখার মতো হয়েছে। প্রতিবছর তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে একজন করে বিখ্যাত ব্যক্তি আসেন। আজ আসার কথা ছিল সুপারষ্টার জাফরান জাফির। জাফরান জাফির সিনেমা বলতে সবাই পাগল। সবাই ছবি তোলার জন্য আর একসঙ্গে ভিডিও করে রাখার জন্য নানারকম পরিকল্পনা করে রেখেছিল। তবে সবারই আশঙ্কা ছিল এত অল্প সময়ের মধ্যে ওরা সবাই জাফির কাছে পৌঁছাতে পারবে কি না। এখন দেখে ঘটনা ভিন্ন। জাফি একা আসনি। সঙ্গে আরেকজন জাফিকে নিয়ে এসেছে। তাদের সদনে এখন দুই-দুইটা জাফি। বোঝাই যাচ্ছে একটা জাফি আসল, একটা জাফি রোবট। কিন্তু কোনটা রোবট কোনটা আসল, সেই পার্থক্য তারা করতে পারছে না। অবশ্য তা নিয়ে যে কারও খুব বেশি মাথাব্যথা আছে, তা-ও নয়। তারা জাফিকে পেয়েই খুশি।সুপারষ্টার অভিনেতা জাফরান জাফি!

-সমাপ্ত-

তো সম্মানিত পাঠকগণ কেমন লাগল এই "অভিনেতা" বিজ্ঞান কল্প গল্পটি তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি ভালোই লেগেছে। আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর পেতে ভিজিট করুন myproshno.xyz। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন