অভিনেতা (পর্ব :১) - Storybd3

Latest

বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

অভিনেতা (পর্ব :১)



পর্ব : ১

অভিনেতা

আহমেদ খান

এক

লিরা বলল, 'এখন থেকে তুমি যেকোনো সময় স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করতে পারো !' লিরা তরুণী, তার ওপর সুন্দরী। হাসলে তার গালে টোল পড়ে। এর আগেও দেখেছে জাফরান জাফি। কিন্তু লিরা এখন হাসছে না। মুখ অত্যন্ত গম্ভীর। বোঝাই যাচ্ছে বিষয়টা তার পছন্দ হয়নি। এই সময়ে এসেও একজন আইনজীবী ব্যক্তিগত এমন বিষয় নিয়ে মেজাজ হারাতে পারে? জাফি বিস্মিত। তার বিস্ময়ের প্রকাশ ঘটল মুখে এক টুকরো হাসি টেনে। 'তুমি হাসছ নাকি?' 'না তো। কাল রাত্রে মিল্যাক্সি নিয়েছি , হয়তো তারই প্রভাব।' 'জানো না. . . উত্তেজনাকর হলেও মিল্যাক্সি আসলে একধরনের খারাপ ড্রাগ। খুব দ্রুত তোমাকে হতাশ করে ফেলবে ড্রাগটা... অবশ্য তোমাকে বলেই কী লাভ! তুমি এমনিতেই আজ হতাশার ভেতর।' 'তোমাকে দেখে আমার সব হতাশা কেটে যায় লিরা।' 'বিশ শতকের সিনেমার নায়কের মধ্যে সংলাপ দিয়ো না। শুনতে খুব খারাপ লাগে। তুমি আমাদের আইডল। এই সময়ের সুপারস্টার। 'হাহ! সুপার স্টার!' লিরা তাকিয়ে থাকল জাফির দিকে। বোঝাই যাচ্ছে জামিকে নিয়ে সে উদ্বিগ্ন। বলল, 'ইউনিয়ন অনুমতি দিয়েছে, তার মানে এই নয়, তুমি এখনই স্কোয়াডে দাঁড়াতে পারবে। অনেকগুলো নিয়ম-নীতি রয়েছে। আশা করি সেগুলো তুমি জানো?' 'আমার সম্পদের সুষম বণ্টন, আমার স্থায়ী-অস্থায়ী আবাসের উইল, এগুলো তো?' 'তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তোমার ইমেজ। চাইলেই তুমি খুন হতে পারে না, তাই না? তুমি পাবলিক ফিগার। পাবলিকের কাছে কী খবর যাবে, তুমি মারা গেছ? তাহলে সিনেমার কী হবে?' সিনেমা শব্দটা শুনেই একটা অশ্লীল গালি বেরিয়ে এল জাফির মুখ থেকে। থুতু জমল মুখে। লিরা বলল, 'একটু এগিয়ে গিয়ে বাঁয়ে ওয়াশরুম। তুমি থুতু ফেলে আসতে পারো!' জাফি আরেকটা গালি দিল, মনে হলো লিরাকেই।

দুই

খুন হতে পারার এই অনুমতি নেওয়া খুব সহজ ছিল না। নিজের অ্যাপার্টমেন্টে যেতে যেতে ভাবে জাফি। প্রায় তেত্রিশ মাস থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। বিশেষ করে আ ওয়ান্ডার বয় ইন নেপচুন রিলিজের পর তা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমাদৃত হওয়ার পর থেকেই। আরও নিখুঁত করে বললে বলা যায়, যেদিন সে ওই সিনেমাটার জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারটা হাতে পেল, সেদিনই জাফি ঠিক করেছিল, এবার তাকে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে হবে। মরে হতে হবে, কারণ বেঁচে থাকাটা খুব কষ্টকর। এতটাই যে বারবার মনে হয় সে এক অন্য কোনো ব্যক্তির জীবন বয়ে নিয়ে চলেছে, যে জীবন কোনোভাবেই সুখের নয়। ফ্ল্যাটে ঢুতেই চারটা ভয়ে মেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। এর ভেতর দুইটা তার ম্যানেজারের। সে ধাতব কণ্ঠে বলে, আগামী সপ্তাহে তিনটা অনুষ্ঠান আছে জাফির। তিনটা থেকেই পর্যাপ্ত ক্রেডিট আসবে, ফলে নো চিন্তা। প্রথমটি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি। সেখানে জাফি গিয়ে শুধু শুভকামনা জানাবে এবং সবার সঙ্গে হেসে কথা বলবে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। দ্বিতীয়টা একটা ঘরোয়া গেট টুগেদার। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক কাটাতে হবে জাফিকে। তার বিষ্যাত হয়ে ওঠা সিনেমাগুলো থেকে মোট নয়টি সংলাপ অভিনয় করে শোনাতে হবে। সঙ্গে একটা গান গাইবে জাফি। সবার সঙ্গে কেক কাটবে এবং অনুষ্ঠান নিয়ে সাত মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে। এটা হবে দারুণ একটা ডিল। কারণ প্রচুর মুনাফা আসবে এটা থেকে। আর সব শেষেরটা একটু অলাভজনক। কেন্দ্রীয় শিশুসদনে গিয়ে সেখানকার বাচ্চাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ খেলাধুলা- লাফঝাঁপ করতে হবে।। এখান থেকে আয় বেশ কম। কিন্তু যেহেতু জাফি শিশুদের পছন্দ করে, তাই ম্যানেজার এটাকেও না বলেনি। দিনের তৃতীয়বারের মতো জাফি অশ্লীল গালিটা দিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। ম্যানেজার ধাতব কণ্ঠে বারবার জানতে চায়, 'আমি কি তোমার সম্মতি ধরে নেব? আমি কি তোমার সম্মতি ধরে নেব?' মিলাক্সর একটা পিল মুখে চুষতে চুষতে জাফি চিৎকার করে বলে, 'চুপ যা, শালা রোবট! চুপ কর!' ধাতব কণ্ঠটা একটা অদ্ভুত শব্দ তুলে থেমে যায়। জাকি তলিয়ে যায় বিছানায়।

তিন

একটা কমলা ঘরের অনেকগুলো দরজা। দরজার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে চারটা সবুজ কুকুর। কুকুরগুলো হাঁপাচ্ছে। হাঁপাচ্ছে আর এগোচ্ছে। এগোচ্ছে আর একটার পর একটা দরজা খুলে যাচ্ছে। কুকুরগুলো ছুটে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর জাফির মনে হয় তিনটা কুকুরের একটা কুকুর সে। কুকুরটা এবার থমকে দাঁড়ায়। হাঁপাচ্ছে কুকুর। তার মুখ দিয়ে লালা করছে। একটা মিহি কণ্ঠ ভেসে আসছে—জাফি? জাফি? জাফি ওঠো... 


 তো আজকের এই প্রথম পর্বটা এখানেই ইতি টানছি। এই গল্পের শেষ পর্বটা আপনাদের সামনে তুলে ধরব খুব শীর্ঘই। তো এইরকম গল্প আরও পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আর গল্পটা কেমন লাগল নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাকে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন