গ্রহদের গায়ের গন্ধ! - Storybd3

Latest

বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র

সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০

গ্রহদের গায়ের গন্ধ!


কুকুরের মতো প্রাণীর মানুষের গায়ের গন্ধ থেকে অপরাধী শনাক্ত করতে পারে। প্রতিটি মানুষের গায়ের গন্ধ আলাদা। কুকুরের দল সেই গন্ধ আলাদা করে চিনতে পারে। মানুষের গায়ের গন্ধের জন্য দায়ী আসলে ঘাম। শুধু ঘাম নয়, ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এই গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক মানুষের গন্ধ যেমন আলাদা, তেমনি সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহের গন্ধ আলাদা।

পৃথিবীর গন্ধ তাহলে কেমন?

এ প্রশ্নের এককথায় উত্তর হয় না। স্থান-কাল-পারভেদে পৃথিবীর গন্ধ আলাদা। তাই বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশের যেমন গন্ধ, সেটা মিলবে না যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আফ্রিকার গন্ধের সঙ্গে। আবার খােদ বাংলাদেশেই বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের গন্ধ আছে। বসন্তে আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে। তখন এই গঙ্কটাকেই মনে হয় গােটা পৃথিবীর গন্ধ। কিন্তু বাতাবি লেবুগাছের তলায় গেলে আবার পৃথিবীর গন্ধটা একদম আলাদা মনে হবে। এ সময় দেশজুড়ে পথের ধারে গাফফার

কোপের ভেতর ফুটে থাকা ভাট ফুলের সুবাসকেও পৃথিবীর মুবাস বলে মনে হবে। তেমনি বর্ষাকালে বৃষ্টিধোয়া মাটির সোদা গন্ধ, অগ্রহায়ণে তেমন ছাতিম ফুল, শরতের শিউলি কিবা খাতে সরষে ফুলের গন্ধে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। তাই এসব গন্ধকেই বাংলাদেশে বসে পৃথিবীর গন্ধ বলে মনে হয়। পৃথিবীর আবহাওয়া সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জটিল। তাই একক কোনাে গন্ধকে পৃথিবীর গন্ধ বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযােগ নেই।

সম্প্রতি শনির চাঁদ টাইটানের পরিবেশ ও আবহাওয়া নিয়ে একটা গবেষণা চালিয়েছেন নাসার গডার্ড স্পেস সেন্টারের গবেষকেরা। তারা দাবি করেছেন, নাইট্রোজেন আর মিথেন ছাড়াও তৃতীয় একটা রহস্যময় পদার্থ আছে টাইটানের বায়ুমণ্ডলে। সেটা হলো বেনজিন যৌগ। আর এর কারণেই টাইটানের গায়ে (আসলে ভূমণ্ডলে) মিষ্টি একটা গন্ধ আছে। অনেকটা পেট্রলের গন্ধের মতাে। কারণ, পেট্রলের প্রধান উপাদান বেনজিন যৌগ।

টাইটানের গায়ে গন্ধ থাকলে তার মা শনির কোনো গন্ধ নেই। আসলে শনির বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। আর যেখানে বায়ুমণ্ডলের প্রধান দুই উপাদান হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। দুটি গ্যাসই গন্ধহীন। একই কারণে নেপচুনের গন্ধ নেই। ইউরেনাস গ্যাসীয় গ্রহ। এর বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান

হাইড্রোজেন সালফাইড। তাহলে ইউরেনাসের গন্ধটা কেমন। হবে বলুন তো। যারা নতম এইচএসসিতে বিজ্ঞান পড়েছেন, তাদের অজানা থাকার কথা নয় হাইড্রোজেন সালফাইডের গন্ধ কেমন। প্র্যাকটিক্যাল ল্যাবে রসায়নের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন অথচ পচা ডিমের গন্ধ পাননি, এমন লােকের সংখ্যা বিরল। ডিম পচে গেলে এর ভেতর জমা হয় হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। পচা ডিমের যে আঁশটে গন্ধ, সেটার জন্য এই গ্যাসই দায়ী। সুতরাং ইউরেনাসের গন্ধ তাই পচা ডিমের মতাে। শুক্র, মঙ্গল ও বায়ুমণ্ডলেও প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন সালফাইড আছে। তাই এ দুটি গ্রহের গন্ধও পচা ডিমের মতো।

বৃহস্পতির আসলে বিশাল এক গ্যাস দানব। এর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের রাজত্ব। তাই পচা ডিমের গন্ধ পাবেন এর কোনাে কোনাে অঞ্চলে। আবার কোথাও মানুষের প্রস্রাবের গন্ধ। পচা ডিমের গন্ধের কারণ, সে অঞ্চলে হাইড্রোজেন সালফাইডের রাজত্ব বেশি। তেমনি কোনাে অঞ্চলে আবার অ্যামােনিয়ার রাজত্ব। আমাদের ইউরিনে প্রচুর পরিমাণে অ্যামােনিয়া অর্থাৎ NH3 যৌগ আছে। আর এই যৌগ যেখানেই পাবেন, সেখানকার গন্ধ প্রস্রাবের মতো হবে।
একারণে ইউরিয়া সারের গন্ধ মানুষের মনের মতাে। 

আমাদের প্রিয় চাঁদের বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। তবু এর গন্ধ আছে। এর ভূত্বকের কারনে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের চেহারা নাম যত সুন্দর এর গন্ধটা কিন্তু ও পৃথিবীর অন্যতম বিধ্বংসী বস্তুর মত  । গান পাউডার  বা পােড়া বারুদ থেকে যেমন গন্ধ ছড়ায়, চাঁদের মাটির গন্ধটাও তেমন। প্রধান বারুদের উপাদান কার্বন, যার আদুরে নাম চারকোল। এ ছাড়া আছে সল্টপিটার বা সােডিয়াম নাইটেড ও সালফার। বারুদের এই তিন উপাদনের মধ্যে কেবল সালফারই আছে চাঁদের মাটিতে বা ধুলাবালুতে। খুব সামান্য পরিমাণে। কিন্তু এ কারণে পােড়া বারুদের মতাে গন্ধ হওয়ার কথা নয়। চাদের মাটির গন্ধ কেন পােড়া বারুদের মতাে, সে রহস্যের সমাধান এখনাে হয়নি।


লেখক : আবদুল গাফফার
সাংবাদিক 
সূত্র : স্পেস ডট কম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন